আর্কাইভ
logo
ads

বগুড়ায় সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশকাল: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২১ পি.এম
বগুড়ায় সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ

মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বগুড়ায় সরকারি উদ্যোগে একটি আধুনিক মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলা জুড়ে ক্রমবর্ধমান মাদক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ, আসক্তদের চিকিৎসা ও সমাজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপকে  ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রটিতে থাকবে চিকিৎসা, কাউন্সেলিং, পুনর্বাসন, পেশাগত প্রশিক্ষণসহ আধুনিক মানের সেবার ব্যবস্থা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ, সামাজিক কর্মী ও প্রশিক্ষিত স্টাফদের সমন্বয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে কেন্দ্রটি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে জমি বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বগুড়া শহরের কৈগাড়ি এলাকায় পুরাতন উপজেলা পরিষদ( সিও অফিস) চত্বরে এক  একর জমি বরাদ্দের জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসক গত ১৩ নভেম্বর ভুমি মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। প্রস্তাবনাটি ভুমি মন্ত্রনালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।জমি বরাদ্দ চুড়ান্ত হলে খুব শীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জিললুর রহমান।তিনি জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের বগুড়ায় নিজস্ব কার্যালয় নেই। প্রস্তাবিত জায়গায় সরকারি ভাবে আট তলা বিশিষ্ট জেলা কার্যালয় কমপ্লেক্স নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ছাড়াও নিজস্ব অফিস,অস্ত্রাগার,আলামত খানা, ব্যারাক,স্টোর,ক্যান্টিনএবং মাঠ নির্মান করা হবে।

মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সহজেই চিকিৎসা সুবিধা পাবে। অনেক পরিবার আর্থিক কারণে বেসরকারি কেন্দ্রের ব্যয় বহন করতে না পারায় চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়,এই নতুন নিরাময়  কেন্দ্র সেই সংকট দূর করবে বলে মন্তব্য করেন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের মনো বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু সায়েম। তিনি আরো বলেন, বগুড়ায় মাদকাসক্তের সংখ্যা অনেক বেশী।জেলায় যেহেতু ১৯ টি বেসরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে, তাহলে বোঝা যায় মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে বলেই নিরাময় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ছে।সেক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিরাময় কেন্দ্র চিকিৎসার মান নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি কম খরচে চিকিৎসা দিতে পারবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই নিরাময় কেন্দ্র আরো অনেক আগে নির্মানের উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল।

সুশাসনের জন্য প্রচার অভিযান ( সুপ্র) বগুড়া জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন,মাদকাসক্তি শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও সামাজিক সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন কার্যক্রম, যা চিকিৎসা শেষে রোগীদের আবারও সুস্থ জীবনে ফিরতে সাহায্য করবে। তিনি আরো বলেন মাদকের প্রভাব পুরো পরিবারকে আঘাত করে। এ কারণে পরিবারভিত্তিক কাউন্সেলিং ও সচেতনতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা আসক্তের পুনরায় মাদকে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি কমাবে।মাদকাসক্ত চুরি,ছিনতাইসহ,  নানা অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়। কার্যকর চিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা অপরাধ কমাতেও সরাসরি ভূমিকা রাখবে।   তরুনদের মধ্যে মাদকাসক্তির প্রবণতা বাড়ছে,এই বাস্তবতায় সরকারি এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করার একটি টেকসই ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে সরকারি ভাবে স্থাপন করা মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র। তিনি আরো মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে মাদক কমানো যাবে না। এক্ষেত্রে মাদকের উৎস মুলে আঘাত করা ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে মাদক কেনা বেচা বন্ধ করতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বগুড়া জেলা কার্যালয় সুত্রে জানাগেছে,বর্তমানে দেশের ঢাকা,চট্টগ্রাম, খুলনা, ও রাজশাহী বিভাগীয় শহরে সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র চালু আছে। বগুড়ায় বেসরকারি ভাবে ১৯ টি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র চালু রয়েছে। সেখানে সব সময় দুই শতাধিক মাদকাসক্ত চিকিৎসাধীন থাকেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এই কেন্দ্রকে একটি মডেল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য। স্থানীয় বাসিন্দারাও আশা করছেন, কেন্দ্রটির কার্যক্রম চালু হলে বগুড়ায় মাদক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে নতুন গতি আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

manusherkotha

manusherkotha

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ