আর্কাইভ
logo
ads

বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশকাল: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯ এ.এম
বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আবারও উত্তাপ বেড়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে যে অবনতি শুরু হয়েছিল, শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তা আরও খারাপ হয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক বক্তব্যে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও ভারতের সেভেন সিস্টার্সে হামলার হুমকি এবং অন্যদিকে বিজয় দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বার্তায় বাংলাদেশের নাম না থাকায় চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে গতকাল ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি ছড়িয়েছে নতুন উত্তাপ। গতকাল বিকালে ‘জুলাই ঐক্য’ ব্যানারে ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচি পালন করে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ১০১টি সংগঠন। এর আগে নিরাপত্তা সংকটের কারণ দেখিয়ে দুপুরের পর থেকে কুড়িলে ভারতের ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। একই সময়ে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তলবে বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ক্রমাবনতিশীল আখ্যায়িত করে এ বিষয়ে নয়াদিল্লির গভীর উদ্বেগ এবং এজন্য ভারতকে দায়ী করে দেওয়া বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। পরে বিকালে ঢাকায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করে বলেন, ‘ভারতের নসিহত আমাদের প্রয়োজন নেই।’ এর আগে রবিবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছিল। তিন দিনের মাথায় নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে পাল্টা তলব করা হলো।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব বি শ্যাম বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে সাউথ ব্লকে তলব করেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে ক্রমাবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নয়াদিল্লির গভীর উদ্বেগ জানাতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করা হয়। এ সময় তাঁর মনোযোগ বিশেষভাবে আকর্ষণ করা হয় কিছু চরমপন্থি গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের দিকে, যারা ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন ঘিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরমপন্থি মহল যে ভুয়া বয়ান তৈরির চেষ্টা করে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এসব ঘটনার বিষয়ে এখনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করেনি কিংবা ভারতের সঙ্গে অর্থবহ কোনো তথ্যপ্রমাণও বিনিময় করেনি।’ ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এর ভিত্তি গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সংগ্রামে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে আরও সুদৃঢ় হয়েছে। বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে ভারত রয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছে ভারত। কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতার আলোকে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন ভারতীয় মিশন ও পোস্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, এমনটাই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নয়াদিল্লির প্রত্যাশা বলে উল্লেখ করা হয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে।

তলবের বিষয়ে বিকালে সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ ভারতের যে বক্তব্য এসেছে তাতে আমাদের নসিহত করা হয়েছে। সেটার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে, এটা নিয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না। অন্তর্বর্তী সরকার প্রথম দিন থেকে স্পষ্টভাবে বলে আসছে যে, আমরা “অত্যন্ত উঁচু মানের”... মানুষ যেন ভোট দিতে যায় এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই, যে পরিবেশ গত ১৫ বছর ছিল না। ভারত আমাদের এটা (নির্বাচন) নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। এটাকে আমি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি। গত ১৫ বছর যে সরকার ছিল, ওই সময় নির্বাচনগুলো যে প্রহসনমূলক হয়েছিল, সে সময় তারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এখন সামনে আমরা একটা ভালো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি, এ মুহূর্তে তো আমাদের নসিহত করার কোনো প্রয়োজন নেই।’

জানা যায়, ’২৪-এর জুলাই গণ অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ  হওয়া শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে বাংলাদেশ একাধিকবার ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দ্রুত অবসানেরও বেশ কয়েকবার আহ্বান জানায় সরকার। কিন্তু এসবের কোনো জবাব দেয়নি ভারত। সর্বশেষ ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করে জানানো হয়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা-কর্মীরা ভারতে বসে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বানচালে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় ভারতের হাইকমিশনারকে এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়।

‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা, সড়ক অবরোধ : শেখ হাসিনাসহ সব খুনিকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়া ও ভারতীয় ‘প্রক্সি রাজনৈতিক দল’, মিডিয়া লীগ ও সরকারি কর্মকর্তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ‘মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন’ কর্মসূচি পালন করেছে জুলাই ঐক্য। গতকাল বেলা ৩টার দিকে রামপুরা ব্রিজ থেকে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে মিছিল যাত্রা করলে বাড্ডায় পুলিশ মিছিল আটকে দেয়। উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সামনে মার্চ টু ইন্ডিয়ান হাইকমিশন কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হওয়ার পর সেখানে ৪০ মিনিটের মতো অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। আয়োজকরা সড়ক অবরোধ করে ভারতকে হুঁশিয়ার করে বিভিন্ন বক্তব্য দেন। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে ছাত্র-জনতা সড়ক অবরোধ তুলে নিলে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। এ কর্মসূচিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের একটি অংশ, ডাকসু ও জাকসুর একাধিক নেতা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, স্কুলের শিক্ষার্থীসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

ভারতের ভিসা সেন্টার বন্ধ : নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় গতকাল বেলা ২টা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় ঢাকার কুড়িলে অবস্থিত ভারতীয় ভিসা সেন্টার- আইভ্যাক। সকালে সেন্টারের ওয়েবসাইটে এ-সংক্রান্ত নোটিসে বলা হয়েছে, ‘উ-ত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বুধবার বেলা ২টার পর আর কোনো কার্যক্রম চলবে না। এই সময়ে যাদের আবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল, তাদের জন্য পরবর্তীতে সময় নির্ধারণ করা হবে।’ ওয়েব নোটিসে ভিসা সেন্টার সাময়িক নাকি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

manusherkotha

manusherkotha

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ